প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি
প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি নগদ সফটওয়্যারের মাধ্যমে টাকা ছাড় দেওয়া চলছে। গত কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা বিপুল ভাবে প্রতারক চক্র অভিভাবকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। পুনরায় উপবৃত্তির টাকা ছাড় চলমান এমতাবস্থায় সাবধানতা জরুরী।
প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প:
পটভূমি:
- দারিদ্রপীড়িত শিশুদের স্কুল গমন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৩ সালে শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচী (FFE) গ্রহণ করে। দেশের ১২৫৫টি ইউনিয়নের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরিদ্র শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়। শহর এলাকা বাদে দেশের ২৭% এলাকায় এ কর্মসূচী চালু ছিল।
- (FFE) কর্মসূচীর সাফল্য বিবেচনায় সরকার ১৯৯৯ সালে পৌর এলাকা বাদে অবশিষ্ট ৭৩% এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পভূক্ত করে ছাত্র-ছাত্রীকে মাসিক ২৫.০০ টাকা হারে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প চালু করা হয়।
- উভয় প্রকল্পের সুফল বিবেচনায় ২০০২ সালে প্রকল্প দুইটি একীভূত করে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (২০০২-২০০৭) চালু করা হয়। পরবর্তীতে এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় যা ২০০৮ সালে শেষ হয়। এ কর্মসূচীর আওতায় এক সন্তান বিদ্যালয়ে পাঠালে তার জন্য ১০০.০০ টাকা এবং একের অধিক সন্তানের জন্য ১২৫.০০ টাকা হারে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
- উক্ত প্রকল্পের সফল সমাপ্তির পর সরকার জুলাই ২০০৮ থেকে জুন ২০১৩ মেয়াদে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (২য় পযায়) চালু করে।
প্রকল্প ব্যয় এবং মেয়াদকাল:
- ৫ বছর মেয়াদী প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২০০৮ হতে জুন ২০১৩ পর্যন্ত (সম্পুর্ণ জিওবি);
- প্রকল্পের অনুমোদিত মোট ব্যয়: ৩৯০০২৬.৪৮ লক্ষ।
প্রকল্প বিবরণ:
- প্রকল্পভূক্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ৬২ হাজার ৭৯টি;
- প্রকল্পের আওতাধীন এলাকা: সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকা বাদে দেশের সকল ইউনিয়ন;
- প্রকল্পভূক্ত এলাকার মোট ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা: ০১ কোটি ২৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৪৯ জন;
- সুবিধাভোগী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা: ৭৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪২৬ জন;
- লক্ষ্মীপুর জেলার উপবৃত্তি প্রাপ্ত বিদ্যালয়ের সংখ্যা: ৬৬৪টি;
- লক্ষ্মীপুর জেলার সুবিধাভোগী ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা: ১,০১,৮২৬ জন।
প্রকল্পের আওতাভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ:
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়;
- রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়;
- অস্থায়ী রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়;
- কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়;
- সরকারী অনুদানে এনজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়;
- সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত ইবতেদায়ী মাদ্রাসা;
- মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর;
- শিশু কল্যান ট্রাস্ট বিদ্যালয়।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
- দরিদ্র পরিবারের শিশুদের ভর্তির হার বৃদ্ধিকরণ;
- উপস্থিতির হার বৃদ্ধিকরণ;
- ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের ঝরে পড়া রোধকরণ;
- প্রাথমিক শিক্ষা চক্রের সমাপ্তি হার বৃদ্ধিকরণ;
- প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়ন;
- শিশু শ্রম রোধ ও দারিদ্র বিমোচন
- নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ।
উপবৃত্তির হার এবং সুবিধাভোগী:
- প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রীকে সুবিধাভোগী হিসেবে নিবাচন করা হয়;
- কোন পরিবারে এক সন্তান বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করলে মাসিক ১০০.০০ টাকা এবং একাধিক সন্তান অধ্যয়ন করলে মাসিক ১২৫.০০ টাকা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়;
- নিবাচিত দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীর মাতা, তাঁর অনুপস্থিতিতে পিতা এবং উভয়ের অনুপস্থিতে বৈধ অভিভাবক উপবৃত্তির টাকা গ্রহণ করেন।
উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ পদ্ধতি:
- ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নিবাচিত ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক বরাবরে উপবৃত্তির অথ ছাড় করা হয়;
- ব্যাংকসমূহ হিসাব মোতাবেক সারাদেশে তাদের উপজেলা শাখায় উক্ত অথ প্রেরণ করে;
- সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা হতে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ৩ কি: মি: এর উর্ধ্বে হলে ন্যুনতম ৩টি বিদ্যালয়ের জন্য একটি ক্যাম্প স্থাপন করে ব্যাংক কমকর্তা উপবৃত্তির অর্থ নির্দিষ্ট দিনে সরাসরি সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করেন;
- নির্দিষ্ট দিনে সুবিধাভোগী মায়েরা কেন্দ্র বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন এবং ব্যাংক কমকর্তা একাউন্ট কার্ডের ছবি পরীক্ষা করে মায়ের স্বাক্ষর রেখে টাকা বিতরণ করেন।
উপবৃত্তি প্রকল্পের অর্জন:
- ভর্তির হার বৃদ্ধি পেয়েছে;
- সুবিধাভোগী ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হার ৯১% এ বৃদ্ধি পেয়েছে;
- ঝরে পড়ার হার কমেছে;
- পাশের হার বৃদ্ধি পেয়েছে;
- শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে;
- স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে;
- নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে, ‘‘মা” এর হাতে উপবৃত্তির টাকা প্রদান করায় ছাত্র-ছাত্রীরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছে;
- হাজিরা রেজিস্টার, ক্যাশবই, ফলাফল রেজিস্টার ও বই বিতরণ রেজিস্টার হালনাগাদ হয়েছে;
- প্রকল্পভূক্ত স্কুলসমূহ নিয়মিত মনিটরিং হচ্ছে ফলে শিক্ষার গুনগত মান দৃশ্যত উন্নত হয়েছে। সংগ্রহ: ডিপিই ওয়েব সাইড